The Court Room

জাতীয়

জাতীয়

‘দ্য নিউজ ২৪ ডটকম’ নিবন্ধন পেল

ফাইল ছবি জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন পেয়েছে ডিজিটাল ও মাল্টিমিডিয়া ভিত্তিক অনলাইন সংবাদপোর্টাল ‘দ্য নিউজ ২৪ ডটকম’। রোববার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭ (সংশোধিত ২০২০) অনুসারে ‘দ্য নিউজ ২৪ ডটকমকে’ নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর আগে নিবন্ধনের জন্য প্রাথমিক অনুমোদন দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। পরে নির্ধারিত ফি সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে তথ্য অধিদপ্তরের সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার পর, দ্য নিউজ কর্তৃপক্ষের হাতে নিবন্ধন সনদ হস্তান্তর করা হয়। তথ্য অধিদপ্তরের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত ওই সনদে উল্লেখ করা হয়েছে— সরকার নির্ধারিত সব শর্তাবলী মেনে চলার বাধ্যবাধকতা থাকবে এ অনলাইন গণমাধ্যমের। ২০২৩ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ‘সারাদেশে সবার সাথে’ স্লোগানে যাত্রা শুরু করে ‘দ্য নিউজ ২৪ ডটকম’। শুরু থেকেই একঝাঁক তরুণ, মেধাবী ও পেশাদার সংবাদকর্মী এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে আসছে। পোর্টালটি তথ্যের স্বাধীনতা, জনস্বার্থ ও পেশাদার সাংবাদিকতার মানদণ্ড বজায় রেখে সঠিক সংবাদ পরিবেশনের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।

জাতীয়

প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ঢাবি উপাচার্যের সাক্ষাৎ

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান। ছবি: বাসস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেছেন।  মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয় নিয়মিত অবহিতকরণের অংশ হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপাচার্য এই সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খান ডাকসু নির্বাচন বিষয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশনের উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রম, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে সাম্প্রতিক সময়ে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রধান উপদেষ্টাকে অবহিত করেন। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও স্থাপনা নির্মাণসহ একনেকে অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা বৃহৎ প্রকল্পসমূহের কাজ ত্বরান্বিত করতে প্রধান উপদেষ্টার সহযোগিতা কামনা করেন।  এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল ও জোরদার করতে তিনি সরকারি অনুদান বৃদ্ধির বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সহযোগিতা চান। উপাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্ভাব্য সমাবর্তনে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতি কামনা করেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নসহ সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার উন্নয়নে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতার আশ্বাস দেন। প্রধান উপদেষ্টা  ড. মুহাম্মদ ইউনূস  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জাতীয়

নারী নির্যাতনের ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের

ছবি: সংগৃহীত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ২০২১ সালে এক নারীকে লাঞ্ছিত করার ভিডিওকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ের ঘটনা বলে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টা শনাক্ত করেছে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)-এর ফ্যাক্ট চেক ও মিডিয়া রিসার্চ টিম বাংলাফ্যাক্ট। বাংলাফ্যাক্ট অনুসন্ধান টিম জানিয়েছে, ‘নারী নির্যাতনের ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, ভারতের।’ তারা আরও জানায়, এক নারীকে মারধরের একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছে, এটি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনামলে বাংলাদেশের ঘটনা। বাংলাফ্যাক্ট যাচাই করে দেখেছে, ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এই ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। প্রকৃতপক্ষে, এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনায় ২০২১ সালের ভিডিও। আলোচিত দাবিটি যাচাইয়ে ভিডিওটির কিছু কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৯ জুলাই প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ব্যবহৃত ছবির সঙ্গে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, উত্তর ২৪ পরগনা জেলার কামারহাটি এলাকায় একটি ক্লাবের ভেতরে তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতার সহযোগীরা ওই নারীকে লাঞ্ছিত করে। পরে ঘটনাটির ভিডিও প্রকাশিত হয়। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ সূত্রে গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, ঘটনাটি ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে আড়িয়াদহ তালতলা স্পোর্টিং ক্লাবে ঘটেছিল এবং সেসময় এ ঘটনায় জড়িত দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ভারতের নিউজ ১৮, ইটিভি ভারত, ইন্ডিয়া টিভিসহ একাধিক গণমাধ্যমেও একই ঘটনার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে বলে জানায় বাংলাফ্যাক্ট। পশ্চিমবঙ্গে নারীকে মারধরের পুরনো ভিডিও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের শাসনামলে বাংলাদেশের বলে ইন্টারনেটে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর বলে প্রমাণ পেয়েছে বাংলাফ্যাক্ট। বাংলাদেশে চলমান গুজব, ভুয়া খবর, অপতথ্য প্রতিরোধ এবং জনগণের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছে দিতে দায়িত্ব পালন করছে বাংলাফ্যাক্ট।

জাতীয়

‘পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তারের ব্যবসা করতেন সোহাগ’

ছবি: সংগৃহীত মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে পাথর মেরে হত্যা করা ভাঙারি ব্যবসায়ী লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তারের ব্যবসা করতেন বলে জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন মো. নজরুল ইসলাম। বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। ডিএমপির কর্মকর্তা বলেন, হাজী সেলিমের ভাতিজা পিল্লু কমিশনারের ছত্রছায়ায় বিগত ১৭ বছর অ্যালুমেনিয়ামের পল্লী বিদ্যুতের তারের ব্যবসা করতেন সোহাগ। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নিয়ে এই হত্যাকাণ্ড হয়নি। লাল চাঁদ আগের সরকারের সময়ে পল্লী বিদ্যুতের চোরাই তারের ব্যবসা করতেন। পটপরিবর্তনের পর আরেকটা গ্রুপ এই ব্যবসায় জড়িয়ে গেছে। ফলে তাদের মধ্যে বিভেদ তৈরি হয়। দুই দলই আগে থেকে পরস্পরকে চিনত। ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, ঘটনা চলাকালে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরের মাধ্যমে খবর পেয়ে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে পুলিশ দেখতে পায়, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা মবের পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছেন। ‘চাঁদাবাজদের জায়গা নাই, ব্যবসায়ীদের ভয় নাই’ এমন স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল থেকে মহিন ও পাশের এলাকা থেকে রবিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাথর নিক্ষেপকারী দুজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত এই ঘটনায় মোট ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের রাজনৈতিক পরিচয় আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ সাজ্জাত আলী বলেন, দেশের যেকোনো নাগরিকের রাজনৈতিক পরিচয় থাকতেই পারে। সেটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। এ ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচয়ের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। ডিএমপি নিউজ

জাতীয়

‘বিয়ের মেহেদী হাতেই প্ল্যাকার্ড ধরেছি, টিয়ারশেল খেয়েছি’

লামিয়া ইসলাম। ছবি: বাসস লামিয়া ইসলাম, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম যোদ্ধা। তিনি ছোটবেলা থেকেই রাজনীতি সচেতন। অনেক কম বয়সেই রাজনীতির জটিল বইগুলো অধ্যয়ন করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক বর্ষে পড়ছেন এবং রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।  জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) বিশেষ আয়োজনে নেওয়া সাক্ষাৎকারে এই জুলাই সে সময়ের অভিজ্ঞতা, চ্যালেঞ্জ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তার মতামত তুলে ধরেছেন।  প্রশ্ন: নারী হিসেবে রাজনীতিতে আসায় কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছেন? লামিয়া ইসলাম: রাজনীতিতে এসেছি রাষ্ট্র ও শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের স্বপ্ন নিয়ে। আর এই সংস্কার কেউ এসে করে দেবে না, আমাদের নিজেদেরই সেই সংস্কার করতে হবে। জন্মের পর থেকে আমাদের দেশটাকে যে লুটপাট করা হয়েছে, বলা চলে তা ‘সাংবিধানিকভাবেই স্বীকৃত’। আইনের নানান ফাঁকফোকর ও মারপ্যাচই কাঠামোগতভাবে এই দেশের সরকারকে রাষ্ট্রের সেবক নয়, শোষকে পরিণত করেছে। ফলে এই পুরো ব্যবস্থাপনার সংস্কার জরুরি হয়ে পড়েছে।  রাষ্ট্রটাকে আক্ষরিক অর্থে জনগণের  করে গড়ে তোলার জন্য রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছি। আর আমি যখন রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিই, সেই সময়টা বাংলাদেশে চূড়ান্ত ফ্যাসিজমের সময়। কেউ তার নিজের অধিকারের পক্ষে কথা বলতে পারেন না। কেউ কথা বললেই, তাকে ভয়ভীতি দেখানো থেকে শুরু করে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে।  প্রশ্ন: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কীভাবে যুক্ত হলেন? লামিয়া ইসলাম: যেহেতু আমি আগে থেকেই রাজনীতির মাঠে লড়াই সংগ্রামে যুক্ত ছিলাম। রাষ্ট্র সংস্কার ছাত্র আন্দোলনের সাথে রাজনীতি করি। এর আগে আমরা আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে নানা সময়ে যুগপৎভাবে  রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছি। কোটা সংস্কার আন্দোলন যখন শুরু হলো, তখন থেকেই এই আন্দোলনের নেতৃত্বের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবেই যুক্ত থেকেছি। আমরা বিশ্বাস করতাম, আমাদের ঐক্যবদ্ধতাই আওয়ামী জাহেলিয়াত থেকে আমাদের মুক্ত করবে। ফলে যখনই আমাদের এমন কোনো সুযোগ তৈরি হয়েছে, আমরা তাতে অংশ নিয়েছি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এমনই একটি প্ল্যাটফর্ম যেখান থেকে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান সংগঠিত হয়েছে। এই ছাতা আমাদের এক করেছিল।  আন্দোলনটা শুরু হয়েছিল জুনে। তখন থেকেই এতে যুক্ত থাকি। রাজপথে আসি, মিছিলে যুক্ত হই। নানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সর্বদা যোগাযোগ রাখি।  এই আন্দোলন চলাকালেই আমার বিয়ে হয়। প্রশ্ন: বিষয়টি আপনি ফেসবুকে লিখেছেন, বিয়ের দুইদিন পরই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন। লামিয়া ইসলাম: তথ্যে একটু ভুল আছে। আমি বিয়ের দুইদিন পর আন্দোলনে যুক্ত হইনি বরং বিয়ের জন্য দুইদিন বিরতি নিয়েছিলাম। আমি আন্দোলনের শুরু থেকেই ছিলাম। ১২ জুলাই আমার বিয়ে হয়। তার আগে আমি বিয়ের কেনাকাটা করে শপিং ব্যাগ হাতে নিয়েই মিছিল করেছি। ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেছি। বিয়ে এবং তারপরের দিন আমি সশরীরে আন্দোলনের মাঠে থাকতে পারিনি। অনলাইনসহ বিভিন্ন মাধ্যমে সরব ছিলাম। বিয়ের দুইদিনের মাথায় আর রাস্তায় না নেমে থাকতে পারিনি। আপনি নিশ্চয় জানেন, একজন নববধুর পক্ষে শ্বশুরবাড়ি থেকে এই সময়টা বের হওয়া কতটা কঠিন। ফলে আমাকে শ্বশুড়বাড়ি থেকে মিথ্যা অযুহাত দিয়ে বের হতে হতো। এ ব্যাপারে আমার বরের সহযোগিতা পেয়েছি। বিয়ের মেহেদী তখনও তরতাজা। টকটকে। ফ্যাকাশে হয়নি। অথচ আমি চলে গেছি মিছিলে। বিয়ের মেহেদী হাতেই প্ল্যাকার্ড ধরেছি, টিয়ার শেল খেয়েছি। এই আবেগ আসলে এখন বলে বোঝানো যাবে না। মুক্তির নেশা আসলে আপনার সামনের সবকিছুকে তুচ্ছ করে তুলবে। ওই সময়টা খুবই অস্থিরতার ভেতর দিয়ে গেছে। তখন পুলিশ ছাত্র দেখলেই তাদের মোবাইল ফোন চেক করতো। আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা তা দেখতো। তখন একটা কৌশল নেওয়া শুরু করি। বাসা থেকে যখন বের হতাম, ফোন ফ্ল্যাশ মেরে বের হতাম। আর একটা কাগজে নিজের নাম, মায়ের ফোন নম্বর, হাসবেন্ডের ফোন নম্বর ও বাসার ঠিকানা লিখে নিতাম। আমি তো জানি না, বেঁচে ফিরবো কিনা। দেখা গেল গুলি খেয়ে রাস্তায় আমার লাশ পড়ে আছে।  অন্তত লাশটা যেন আমার পরিবার পায়, এ জন্য এটা করতাম। প্রশ্ন: ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যের সঙ্গে ছিলেন। জুলাইয়ের আন্দোলনে আপনার সেই অভিজ্ঞতাকে কীভাবে কাজে লাগিয়েছেন? লামিয়া ইসলাম: জ্বি, আমরা বেশ কয়েকটি সংগঠন মিলে ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছাত্র ঐক্যে ছিলাম। কিন্তু জুলাই আসলে সবকিছু থেকে আলাদা ছিল। মানুষের ভেতর ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এখানে আসলে আমাদের আন্দোলনটাকে শুধু কন্টিনিউ করে যেতে হয়েছে; আর কিছু না। আমরা জানতাম, যদি আমরা মাঠে ঠিকমতো দাঁড়িয়ে থাকতে পারি; তাহলে আরও বেশি মানুষ এতে অংশগ্রহণ করবেন। রাস্তায় নেমে আসবেন। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-আওয়ামী লীগের নির্যাতন-নিপীড়ন আর আন্দোলন দমনে তাদের যে দুর্বৃত্তায়ন- তা যেকোনো মানুষকেই ছুঁয়ে গেছে। মানুষ তার সন্তানকে রক্ষা করার জন্য মাঠে নেমেছে, বোন তার ভাইকে রক্ষা করার জন্য মাঠে নেমেছে। এই যে মানুষের স্রোত নামতে শুরু করেছিল, তা আটকানোর ক্ষমতা কারো ছিল না। আন্দোলনের ক্ষেত্রে সশস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে বুক চিতিয়ে রুখে দাঁড়ানোটাই কাজে লেগেছে। আপনি সাহস করে দাঁড়িয়ে থাকবেন, দেখবেন আপনার সাথে এসে অনেকে দাঁড়িয়ে গেছে। আপনি তাদের ধাওয়া দিতে গিয়ে দেখবেন কোথা থেকে হাজার হাজার মানুষ এসে আপনার সাথে যুক্ত হয়েছে। প্রশ্ন: জুলাইয়ের কোন ঘটনা বা স্মৃতি কী আপনাকে বারবার নাড়া দেয়? লামিয়া ইসলাম: ২ আগস্ট শাহাবাগে একটা সংঘর্ষের মধ্যে পড়ি। সেখানে গুলি করা হচ্ছিল। আমার চোখের সামনেই দুইজন মানুষ রাস্তায় পড়ে গেল।  চোখের সামনে মৃত্যু। সেই দৃশ্য এখনো মনে পড়লে শিউরে উঠি। প্রশ্ন: রাষ্ট্র সংস্কারের প্রশ্নে আপনারা (রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন) দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। এখন সেই সুযোগ এসেছে।  কেমন রাষ্ট্র দেখতে চান? লামিয়া ইসলাম: আমরা আসলে জনগণের রাষ্ট্র গড়তে চাই। এমন একটা রাষ্ট্র যেখানে সরকার আইনের ঊর্ধ্বে না বরং এমন আইন করতে হবে যেন যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, তাদের জবাবদিহিতে বাধ্য করা যাবে। ক্ষমতা কোনো একক ব্যক্তির হাতে কুক্ষিগত থাকবে না। যেন কেউ চাইলেই টাকা পাচার করতে না পারে, নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিতে হবে। নারী, পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ, জাত নির্বিশেষে সকল নাগরিকের জন্য যেন একটি নিরাপদ দেশ গড়তে পারি। প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে সরকার। মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকবে। রাজনীতি থাকবে তবে তা যেন ক্যাডারভিত্তিক না হয়। ক্ষমতাবান হবেন নাগরিকরা। জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্র কাঠামো নির্মাণ করতে পারলেই আমরা আসলে সত্যিকার অর্থে একটা নাগরিকবান্ধব রাষ্ট্র বিনির্মাণ করতে পারবো। প্রশ্ন: গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশ সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী? লামিয়া ইসলাম: গণঅভ্যুত্থানের একটি বড় প্রত্যাশা ছিল, রাষ্ট্র ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন। পুরোনো ব্যবস্থাপনা বাতিল, জনবিরোধী বিধিবিধান বাতিল, ভেঙে ফেলা প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন।  তবে এসবের বাস্তবায়ন খুব একটা দেখা যাচ্ছে না। তবে সময় এখনো শেষ হয়নি। অবিলম্বে জুলাইয়ের আহতদের সার্বিক চিকিৎসা চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে এবং জুলাই সনদ দিতে হবে।  সংবিধান ও আইনি কাঠামোর সংস্কার করতে হবে। ফ্যাসিবাদের বীজ যেখানে যেখানে আছে তা উৎখাত ও বিচার নিশ্চিত করতে হবে। সেইসাথে বর্তমান সরকারকেও তাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের বিষয়ে জনগণের সামনে জবাবদিহি করতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান  জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর

জাতীয়

সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর ৮ দিনের রিমান্ডে

ছবি: সংগৃহীত রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার পৃথক দুই হত্যা মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাংগীর আলমের আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।  এর মধ্যে মো. রাসেল হত্যা মামলায় পাঁচ দিন ও লিটন উদ্দিন হত্যা মামলায় তিন দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। বুধবার (১৬ জুলাই) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জি এম ফারহান ইশতিয়াকের আদালত শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। এর আগে জাহাংগীরকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ।  এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী ফারজানা ইয়াসমিন রাখি রিমান্ড বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি একজন সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এখানে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তিনি বয়স্ক, অনেক অসুস্থ। হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন। এসব বিবেচনায় তার রিমান্ড বাতিল প্রার্থনা করছি। এ সময় জাহাংগীর আলম বিচারকের উদ্দেশ্যে বলেন, আমার কিছু বলার আছে। অসত্যের সীমা আছে। সেটা লঙ্ঘন হলে আল্লাহর কাছে দায়ী থাকবেন। আমাকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। ৫ আগস্ট অফিস করিনি। ২৭ জুলাইয়ের ঘটনা ৫ আগস্ট দেখানো হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমিও ১৬ বছর ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেছি। আমাকে ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে এক বছর আগে গ্রেফতার করা হয়েছে। অথচ এতদিন মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। পরে শুনানি শেষে আদালত তার আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিন একই আদালত আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে যাত্রাবাড়ী থানার দুই হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

জাতীয়

মালিহার ফেসবুক লাইভে বদলে যায় জাবির আন্দোলনের ধারা

মালিহা নামলাহ। ফাইল ছবি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সারাদেশ নীরব থাকলেও সরব থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই দেশের যে কোন অন্যায়ের ঘটনায় বরাবরই প্রতিবাদমুখর এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর ব্যতিক্রম হয়নি কোটা সংস্কার আন্দোলনেও। অযৌক্তিক কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে ও পরবর্তীকালে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রায় অর্ধেকই নারী। ফলে সকল আন্দোলন সংগ্রামে নারী শিক্ষার্থীরা সব সময়ই সরব। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও নিজেদের সবটুকু দিয়ে লড়াই করেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের জোটবদ্ধ রেখে আন্দোলন পরিচালনায় যে ক’জন নারী শিক্ষার্থী সম্মুখ সারিতে অবস্থান করতেন তাদের মধ্যে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগের ৫০ ব্যাচের ছাত্রী মালিহা নামলাহ-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। মো. মোসলেহ উদ্দিন ও রুহীনা তাসনীম দম্পতির কন্যা মালিহার বেড়ে ওঠা ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজিলাতুন্নেছা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। মালিহা সর্বশেষ বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করেছে। ১৫ জুলাই দিবাগত রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবনের ভেতর কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর ছাত্রলীগ নৃশংস হামলা শুরু করলে মালিহা তার ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে বিষয়টি সরাসরি উপস্থাপন করেন। তার এ সাহসী ভূমিকার কারণে সেদিন রাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের নৃশংস হামলা দেশবাসীকে নাড়া দিয়েছিল। ভিডিও দেখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মধ্যরাতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে ছুটে এসেছিলো উপাচার্য ভবনে। পাল্টে গিয়েছিলো দৃশ্যপট। পালাতে বাধ্য হয়েছিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেদিন ও পরবর্তী সময়েও স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে সম্মুখ সারিতে অবস্থান নিয়ে আন্দোলনকে বেগবান করেছিলেন মালিহা। সম্প্রতি বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ের স্মৃতিচারণ করে তুলে ধরেছেন তার সাহসী অভিজ্ঞতার কথা। প্রশ্ন: একজন নারী শিক্ষার্থী হিসেবে এই আন্দোলনে কীভাবে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন? মালিহা: বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর থেকে ক্যাম্পাসের যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংঘটিত আন্দোলনে আমি সরব থাকতাম। ব্যক্তিগতভাবে কলেজ জীবন থেকেই আমি বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত ছিলাম। ২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলনেও আমি শুরু থেকেই সম্পৃক্ত ছিলাম। তবে শারীরিক অসুস্থতার জন্য কিছুদিন বাড়িতে অবস্থান করেছিলাম। ১৪ জুলাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ হামলা শুরু করলে আমি পুনরায় ক্যাম্পাসে আসি। এসে আন্দোলনে যোগ দিই। প্রশ্ন: কোটা সংস্কার আন্দোলন যে স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে রূপ নেবে এটা কি আপনারা জানতেন? মালিহা: বাহ্যিক দৃষ্টিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন হিসেবেই এর শুরু। তবে আমি জানতে পেরেছিলাম কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের পরিকল্পনা ছিলো এই আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে স্বৈরাচারের কবল থেকে মুক্ত করা। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলন শুরু করা। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুধাবন করেছিলাম যে এই আন্দোলন সফল হলে পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচার পতন আন্দোলন শুরু হবে। প্রশ্ন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছিলো? মালিহা: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ সালেও কোটা সংস্কার আন্দোলন হয়েছিলো। তখন আমরা ক্যাম্পাসে ভর্তি হইনি। ২০২৪ এর ৫ জুন যখন ২০১৮ সালের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট কর্তৃক নাকচ ঘোষণা করা হলো তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি জায়গায় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ শুরু করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও ৬ জুন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সিয়াম ভাইসহ কয়েকজন মিটিং করে। লাইব্রেরিতে বেশিরভাগই চাকুরীপ্রার্থী শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন। তারা সাথে সাথে আলোচনার মাধ্যমে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। প্রথমে কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়। এভাবে ২০২৪ এর কোটা সংস্কার আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রশ্ন: ক্যাম্পাসে শুরুতে এ আন্দোলন অহিংস থাকলেও কিভাবে সহিংসতায় রূপ নিলো? মালিহা: আমরা প্রথমে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকি। বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, প্রতিদিন অল্প সময় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ এবং আরো কিছু কর্মসূচি পালন করি। এতদিন কারোর সাথে কোন সহিংসতা হয়নি। তবে ১৪ জুলাই স্বৈরাচার শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকার সম্বোধন করলে শিক্ষার্থীরা সে ন্যারেটিভ ভাঙ্গতে ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান দেয়। এরই প্রেক্ষিতে সেদিন সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের এক আন্দোলনকারীর ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। তখন থেকেই মূলত ছাত্রলীগ আগ্রাসী হয়ে ওঠে। ধীরে ধীরে আন্দোলন সহিংসতায় রূপ নেয়। প্রশ্ন: শুরু থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ক্যাম্পাসে আন্দোলন কীভাবে ধারাবাহিক রূপ নেয়? মালিহা: ক্যাম্পাসে আন্দোলন শুরু হয়েছিলো ৬ জুন। ২০১৮ সালের ৫ জুন কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন হাইকোর্ট নাকচ ঘোষণা করলে আবারো কোটা সংস্কার আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। পরবর্তী সময়ে ঈদের ছুটি শুরু হওয়ায় ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। তখন আন্দোলন স্তিমিত হয়ে পড়ে। তবে ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরলে আন্দোলন নতুন করে শুরু হয়। কয়েকদিন আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরে বাড়ি চলে যাই। এর মধ্যে আন্দোলনে কোন সহিংসতা হয়নি। নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ক্যাম্পাসে চলতে থাকে। ১৪ জুলাই হঠাৎ করে জাহাঙ্গীরনগরের আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। সেদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলনকারীদের রাজাকার বলে ঘোষণা দিলে শিক্ষার্থীরা ‘আমি কে, তুমি কে, রাজাকার, রাজাকার’ বলে স্লোগান দেয়। সেদিন সন্ধ্যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আটকে রেখে মারধর করে। তাকে ছাড়াতে অন্য আন্দোলনকারীরা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে যায়। সেখানে ছাত্রলীগ সহিংসতা প্রদর্শন করে। লাবিব ভাইসহ অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। সিসিটিভি ফুটেজ না দেখানোয় হলের প্রভোস্টকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। এসব দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হলে আমি আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি। আন্দোলনে যোগ দিতে ১৫ তারিখ আমি পুনরায় ক্যাম্পাসে ফিরে আসি। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা ১৫ জুলাই সন্ধ্যায় আবারো আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা করে। সেদিন বঙ্গবন্ধু হলের সামনে তারা সরাসরি লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে মিছিল আটকিয়ে হামলা চালায়। এতে অনেক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। এমনকি ফাইজা আপুসহ অনেক নারী শিক্ষার্থীর ওপরও তারা নৃশংস হামলা করে। জাহিদ ভাইয়ের মাথা ফেটে বীভৎস অবস্থা হয়। সেদিন সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে দেখি আহত শিক্ষার্থীদের আর্তনাদ। অনেক আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ক্যাম্পাস তখন আমাদের জন্য পুরোপুরি অনিরাপদ। তাই আমরা এই হামলার বিচার ও নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিই। কিন্তু উপাচার্য ও তার প্রশাসন আমাদের কোন আশ্রয় কিংবা বিচারের আশ্বাস দিতে পারেনি। কিছুক্ষণ পর উপাচার্য বের হয়ে ১৫ মিনিটের সময় নেয়, কিন্তু এতেও কোন ফলাফল আসেনি। শুরুর দিকে সেখানে আমরা ২০০-২৫০ জন আন্দোলনকারী ছিলাম। পরে ধীরে ধীরে কমে ৭০-৮০ জন আন্দোলনকারী অবস্থান করছিলাম। এক সময় আমরা জানতে পারি ছাত্রলীগ আবারো বহিরাগত সন্ত্রাসী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করাচ্ছে আমাদের ওপর হামলা করার জন্য। তারা বিভিন্ন ধরনের দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্রসহ মহড়া দিতে থাকে। এ অবস্থায় আমরা আতংকিত হয়ে উপাচার্য ভবনের মেইন গেইট টপকিয়ে ভেতরের উঠোনে প্রবেশ করি। উপাচার্যের কাছে আশ্রয় চাই। কিন্তু তিনি তার বাসার মূল দরজা খোলেননি। আমরা দরজার সামনে অবস্থান নিই। মধ্যরাতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা মিছিলসহ এসে বাইরে থেকে আমাদের ওপর হামলা চালাতে শুরু করে। তারা ইট ও পেট্রোল বোমা ছোড়ে অনেকক্ষণ। আমরা কোন রকম ভেতরে নিজদের একসাথে আঘাত থেকে রক্ষা করি। সেই সময়ই প্রথম আমি ফেসবুক লাইভে এসে ছাত্রলীগের এই নৃশংসতা প্রচার শুরু করি। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু শিক্ষক আমাদের প্রস্তাব দেয় তারা নিরাপদে নারী শিক্ষার্থীদের হলে পৌঁছে দিবে। কিন্তু আমরা বুঝছিলাম এটা আমরা

Scroll to Top